মানুষের হৃৎপিণ্ডের গঠন

জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র - মানুষের হৃৎপিণ্ডের গঠন

মানুষের হৃৎপিণ্ডের গঠন ( Structure of human heart):
দেহের যে প্রকোষ্ঠময় পেশল অঙ্গের নিরবিছিন্ন ছন্দময় সংকোচন ও প্রসারণের কারণে সমগ্র দেহে রক্ত সংবাহিত হয় তাকে হৃৎপিণ্ড বলে।

রক্তকে রক্তবাহিকার ভিতর দিয়ে সঞ্চালনের জন্য হৃৎপিণ্ড মানবদেহের পাম্পযন্ত্র (Pumping machine) রুপে কাজ করে। একজন সুস্থ মানুষের জীবদ্দশায় হৃৎপিণ্ড গড়ে ২৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়ে প্রতিটি ভেন্ট্রিকল(নিলয়) প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন লিটার (বা দেড় লক্ষ টন) রক্ত বের করে দেয়। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষে হৃৎপিন্ডের ওজন ২৫০-৩৯০ গ্রাম ও স্ত্রীতে ২০০-২৭৫ গ্রাম। ভ্রূণ অবস্থায় মাতৃগর্ভে ৬ সপ্তাহ থেকে হৃদস্পন্দন শুরু হয় এবং আমৃত্যু এ স্পন্দন চলতে থাকে।

অবস্থান (Position) :
মানুষের হৃদপিণ্ড বক্ষগহ্বরে মধ্যচ্ছদার উপরে ও দুই ফুসফুসের মাঝ-বরাবর বাম দিকে একটু বেশি বাঁকা হয়ে অবস্থিত। এটি দেখতে ত্রিকোণাকার; গোঁড়াটি চওড়া ও ঊর্ধ্বমুখী থাকে, কিন্তু সূচালো শীর্ষ দেশ নিচের দিকে পঞ্চম পাঁজরের ফাঁকে অবস্থান করে।

আবরণ (Cover) :
হৃৎপিণ্ড একটি পাতলা দ্বিস্তরী আবরণে আবৃত। এর নাম পেরিকার্ডিয়াম  (pericardium)।
পেরিকার্ডিয়াম এর বাইরের দিক তন্তুময় পেরিকার্ডিয়াম (fibrious pericardium) এবং এর ভেতরের দিক সেরাস পেরিকার্ডিয়াম (serous pericardium) নামে পরিচিত। সেরাস পেরিকার্ডিয়াম আবার দুই স্তরে বিভক্ত, বাইরের দিকে প্যারাইটাল স্তর (parietal layer) এবং ভেতরের দিকে ভিসেরাল স্তর (visceral layer)। প্যারাইটাল ও ভিসেরাল স্তর দুটির মাঝখানের পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইড (pericardial fluid) নামক তরল পদার্থ থাকে।

প্রাচীর (wall) :
হৃৎপিন্ডের প্রাচীর অনৈচ্ছিক পেশি ও যোজক টিস্যু নিয়ে গঠিত। এর প্রাচীর গঠনকারী পেশীকে কার্ডিয়াক পেশি (cardiac muscle) বলে।
এপিকার্ডিয়াম (Epicardium)
মায়োকার্ডিয়াম (Myocardium)
এন্ডোকার্ডিয়াম (Endocardium)

হৎপিন্ডের প্রকোষ্ঠ সমূহ (Chambers of Heart):
মানব হৃৎপিণ্ড সম্পূর্ণরূপে চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট (completely four chambered) একটি ফাঁপা অঙ্গ। এর উপরের দুটি আট্রিয়া (atria: একবচনে atrium) বা অলিন্দ ও নিচের দুটি ভেন্ট্রিকল (ventricle) বা নিলয়। অ্যাট্রিয়ামের তুলনায় ভেন্ট্রিকলের প্রাচীর পুরু ও পেশীবহুল। বাম ও ডান অ্যাট্রিয়াম আন্তঃঅ্যাাট্রিয়াল (আন্তঃঅলিন্দ) পর্দা (inter-atrial septum) এবং বাম ও ডান ভেন্ট্রিকল আন্তঃভেন্ট্রিকুলার (আন্তঃনিলয়) পর্দা (inter-ventricular septum) দিয়ে পৃথক থাকে।

ডান আট্রিয়াম (Right atrium):
এর ভেতরের গায়ে সাইনো-আট্রিয়াল নোড (sino-atrial node) বা পেস মেকার (pace maker) নামে একটি পেশিখন্ড থাকে। এখান থেকে হৃৎস্পন্দন শুরু হয়। ডান আট্রিয়াম সুপিরিয়র ভেনাক্যাভা (অগ্র বা ঊর্ধ্ব মহাশিরা) ও ইনফেরিয়র ভেনাক্যাভার (পশ্চাৎ বা নিম্ন মহাশিরা) মাধ্যমে যথাক্রমে দেহের সম্মুখ ও পশ্চাৎ অঞ্চল থেকে এবং করোনারি শিরা ও করোনারি সাইনাস এর মাধ্যমে হৃৎপিন্ডের প্রাচীর থেকে ফিরে আসা CO2 সমৃদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে। ডান অ্যাট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্র (right atrio-ventricular aperture)-এর মাধ্যমে ডান আট্রিয়াম ডান ভেন্ট্রিকলে উন্মুক্ত হয়।
এ ছিদ্রপথে ট্রাইকাসপিড কপাটিকা (tricuspid valves) নামে তিনটি ঝিল্লিময় টুপির মত কপাটিকা থাকে।

বাম আট্রিয়াম (Left atrium):
প্রকোষ্ঠটি পালমোনারি বা ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে ফুসফুস থেকে ফিরে আসা O 2  সমৃদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে। বাম আট্রিয়াম বাম আট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রের মাধ্যমে বাম  ভেন্ট্রিকলে রক্ত প্রেরণ করে।
এ ছিদ্র মুখে বাইকাসপিড কপাটিকা (bicuspid valves) বা মাইট্রাল কপাটিকা (mitral valves) নামক দুটি ঝিল্লিময় টুপির মতো কপাটিকা থাকে।

ডান ভেন্ট্রিকল (Right ventricle):
এটি ডান আট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রের মাধ্যমে ডান আট্রিয়াম থেকে CO 2  সমৃদ্ধ রক্ত সংগ্রহ করে।
ডান ভেন্ট্রিকলের সম্মুখ ভাগ থেকে ফুসফুসীয় ধমনী (pulmonary artery) সৃষ্টি হয় যার মাধ্যমে CO 2 সমৃদ্ধ রক্ত ডান ভেন্ট্রিকল থেকে ফুসফুসে সঞ্চালিত হয়। এ ধমনির মুখে একটি একমুখী অর্ধচন্দ্রাকার বা সেমিলুনার কপাটিকা (semilunar valve)  থাকে।
হৎপিন্ডের লম্বচ্ছেদ

বাম ভেন্ট্রিকল (Left ventricle):
হৃৎপিন্ডের বাম দিকে অবস্থিত বাম ভেন্ট্রিকুলার প্রাচীর তুলনামূলকভাবে অধিক পুরু কারণ এ প্রকোষ্ঠ থেকেই সমগ্র দেহের রক্ত প্রেরিত হয় (অন্যদিকে ডান ভেন্ট্রিকল থেকে রক্ত কেবল ফুসফুসে প্রেরিত হয়) যাতে অনেক বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। বাম ভেন্ট্রিকল বাম আট্রিয়াম থেকে বাম আট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রের মাধ্যমে O 2 সমৃদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে। বাম ভেন্ট্রিকলের সম্মুখ হতে সিস্টেমিক মহাধমনী বা অ্যাওট্রা (aorta) উৎপন্ন হয় এবং এর মাধ্যমে সমৃদ্ধ রক্ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গের প্রেরিত হয়।

Content added || updated By
Promotion